একুশে সিলেট ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গোলাপগঞ্জে শহীদ হওয়া আলোচিত সানি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আব্দুল আহাদ ওরফে নুরসহ সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এক মানববন্ধন ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার পৌর শহরের চৌমুহনীর নূর ম্যানশনের সামনে উপজেলা ও পৌরবাসীর ব্যানারে এই মানববন্ধন আয়োজিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত বছর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার এক দফা আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ও পুলিশ-বিজিবি’র গুলিতে সানি আহমদসহ ৭ জন নিহত হন। এই মামলার অন্যতম আসামি আব্দুল আহাদ প্রকাশ্যে গোলাপগঞ্জ এলাকায় চলাফেরা করলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর ফলে গোলাপগঞ্জের ৭ শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, মামলা দায়ের করার পর থেকে অভিযুক্তরা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য বাদী, বাদীর পরিবার ও মামলার সাক্ষীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযুক্ত আহাদসহ নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য অভিযোগ জানানো হয়েছে বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন। স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে পুলিশ আহাদসহ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করছে না বলে বক্তারা দাবি করেন। সভায় বক্তারা, আওয়ামী লীগের দোসর আহাদসহ সকল ছাত্র-জনতা হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে জুলাই আন্দোলনে গোলাপগঞ্জে শহীদ সানির পরিবারের সদস্যরা তাদের বেদনাহত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
সানির পিতা কয়সর আহমদ বলেন, ‘আমার ছেলে দেশের মানুষকে ফ্যাসিবাদী হাসিনার কবল থেকে রক্ষা করতে শহীদ হয়েছে এবং তার এই বলিদান সফল হয়েছে। ইতিহাস আমার ছেলেকে মনে রাখবে।’ তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে আতঙ্কে থাকার কথা জানিয়ে বলেন, শহীদদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মামলা তুলে নিতে আওয়ামী লীগের দোসররা হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া তার ছেলের হত্যা মামলার সাক্ষীদের এবং সহযোগিতাকারীদের দেশের বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলায় আসামি করা হচ্ছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার ছেলে শহীদ হওয়ার এক বছর হয়ে গেলেও আহাদসহ খুনিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের ছেলেরা জীবন উৎসর্গ করে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করলেও তাদের হত্যার বিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে, এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার।
ব্যবসায়ী ও সালিশ ব্যক্তিত্ব আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে এবং আফজল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সানি আহমদের পিতা কয়সর আহমদ, চাচা আজমল হোসাইন, মামা বিয়ানীবাজার বিএনপি নেতা আলী আব্বাস, নিহতের ছোট ভাই মাদরাসাছাত্র ছামি আহমদ ও চাচাতো ভাই সাব্বির আহমদ। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, এই প্রতিবাদ সভা সফল করার লক্ষ্যে ২ অক্টোবর রাতে এবং সভা চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত আহাদকে গ্রেফতারের দাবিতে গোলাপগঞ্জ বাজারে ব্যবসায়ী ও উপস্থিত লোকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়।
Leave a Reply